পানি সংকটে কমেছে বোরো আবাদ
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২৮-০৩-২০২৫ ০৪:৩১:৫৬ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৮-০৩-২০২৫ ০৪:৩১:৫৬ অপরাহ্ন
ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী অঞ্চলে নতুন সেচ নীতিমালা কর্যকর হয়েছে চলতি বছরের বোরো চাষ থেকে। প্রথম বছরের নীতিমালা কার্যকর করায় পানি সংকটে ১০ হাজারের ওপরে জমিতে চাষ করা সম্ভব হয়নি।
কৃষকরা বলছেন, পানি না পাওয়ার কারণে তারা এই চাষ করতে পারেননি। ফলে রাজশাহী অঞ্চলে কমছে ধানের উৎপাদন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ মিলে রাজশাহী বিভাগের কৃষি অঞ্চল। এ অঞ্চলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৭৫ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে। তবে গতবছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৮৬৫ হেক্টর জমি বেশি বোরো ধান চাষ হয়। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে ধান চাষ হয় ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে।
তবে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ধান চাষ কমেছে। এবছর ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৭৬ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে। পানি সংকটের কারণে এবার চাষ হয়েছে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমি। ফলে গত বছরের চেয়ে এবার চাষ কমেছে ১০ হাজার ২০০ হেক্টর জমি।
এরমধ্যে রাজশাহী জেলাতে কমেছে এক হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে। নওগাঁতে কমেছে ৫৪০ হেক্টর জমিতে, নাটোরে কমেছে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে কমেছে ৪ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে।
বিএমডিএর তথ্য বলছে, পানি সংকটে থাকা আট উপজেলায় সংস্থাটির মোট তিন হাজার ৫৮৮টি সচল গভীর নলকূপ রয়েছে। এরমধ্যে এক হাজার ৯৬০টি নলকূপ তীব্র পানি সংকটপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের প্রাপ্যতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি নলকূপ ২৪-৪০ হেক্টর জমিতে পানি সেচ সরবরাহ করতে পারে।
বিএমডিএর নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্থিতিশীল রাখতে বছরে একটি গভীর নলকূপ মোট ১৯৬০ ঘণ্টা চালানো হবে। এরমধ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত আসন্ন বোরো মৌসুমে একটি গভীর নলকূপ মোট ৯৮০ ঘণ্টা চলবে। ফলে এসব নলকূপের আওতাধীন জমিতে বোরো ধান চাষ অর্ধেক থেকে শূন্যে নামিয়ে আনা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোদাগাড়ী উপজেলা বিএমডিএর একজন নলকূপ অপারেটর বলেন, আমার এলাকাতে যে জমি আছে তার ৫ ভাগের এক ভাগ পানি দিতে পারছি। অফিস থেকেও তেমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেকেই এবার ধান চাষ করতে পারেনি।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কালিদিঘি গ্রামের কৃষক মো. মামুন বলেন, বোরো ধান চাষ করার জন্য দুই মাস আগে বীজতলা তৈরি করেছিলাম। কিন্তু চাষ করতে পারিনি। চারা রোপণের ১৫ দিন আগে আমার শুনেছি আমাদের ১০ বিঘা জমির তিন বিঘা ধান চাষ করতে পারবো। আমরা এবার তাই করেছি।
পুরভারা গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, এবার ১২ বিঘা জমি দেড় লাখ টাকার ওপরে লিজ নিয়েছি। লিজ নেওয়ার পর শুনছি দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে পারবো। এতে আমার বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। এখন আর কী করার পানি না দিলে তো ধান হবে না। ফলে বাঁকি জমিতে অন্য কিছু চাষ করতে হবে।
শেখেরপাড়া গ্রামের মো. আউয়াল জানান, তিনি তার এক বিঘা জমি থেকে যে পরিমাণ ধান পান, তা দিয়ে তার সারা বছর চলে যায়। কিন্তু এখন বাইরে থেকে চাল কিনে খেতে হবে। এ বিষয়ে জানতে বিএমডিএর চেয়ারম্যান ড. মো. আসাদ উজ জামানকে একাধিক বার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. আজিজুর রহমান বলেন, ধান চাষ গত বছরের তুলনায় কমেছে। তবে এবার অধিক হারে সরিষা চাষ হয়েছে। মূলত এ কারণেই চাষ কিছুটা কমতে পারে। আশা করছি এগুলো সামনের আউশে এসে পূরণ হবে। তবে পানি সংকটে চাষ করতে পারছেন না এমনটি আমি শুনিনি। কৃষকরা তাদের ইচ্ছামতো চাষ করছেন। মূলত তারা এবার সরিষার কারণে ধান চাষ কম করেছেন। আগামীতে এটি পূরণ হয়ে যাবে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স